প্রেমের প্রতীক্ষা: অনুগল্প – এক মহাকাব্যিক পুনর্মিলন
অলিম্পাসের মেঘমুক্ত আকাশের নিচে, এথেন্সের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিল আদ্রিতা। তার হরিণী চোখে ছিল এক বেদনার প্রতীক্ষা। প্রতিদিন গোধূলি লগনে, সে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকে, হেমন্তের গোধূলি বেলার সোনালী আলো তার মুখে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রীক দেবী হেরার মতো সে ছিল অনন্য সুন্দরী, কিন্তু তার হৃদয়ে ছিল এক নীলাভাব কষ্ট।
আজও আদ্রিতা দাঁড়িয়ে ছিল, তার হাতে একটি ছোট্ট মার্বেল পাত্র। পাত্রের মধ্যে ছিল গোলাপের পাঁপড়ি, যেন অ্যাফ্রোদিতির মুকুট থেকে চুরি করা সৌন্দর্য। এই পাত্রটি সে প্রিয়জনের জন্য প্রস্তুত করেছে, যে অনেক বছর আগে তাকে ছেড়ে গেছেন যুদ্ধের ময়দানে। মেঘদূত, তার প্রেমিক, ছিল এক সাহসী যোদ্ধা, যে প্রতিজ্ঞা করেছিল ফিরে এসে আদ্রিতার সাথে নতুন জীবন শুরু করবেন। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেছে, মেঘদূত আর ফিরে আসেনি।
আদ্রিতা প্রতিদিন এই প্রান্তে দাঁড়িয়ে তার প্রিয়জনের অপেক্ষা করে, মনে মনে আশা করে সে ফিরে আসবে। সে মনে মনে প্রার্থনা করে জিউসের কাছে, যেন তার প্রিয়জন নিরাপদে ফিরে আসে। এথেন্সের প্রতিটি গলি, প্রতিটি পথ, তার জন্য বয়ে আনে শুধু স্মৃতির ঝড়।
আজকের সন্ধ্যা একটু ভিন্ন ছিল। হঠাৎ দূর থেকে একটি ছায়া দেখা যায়। আদ্রিতার হৃদয় দ্রুত স্পন্দিত হতে থাকে। তার চোখে জল এসে যায় যখন সে দেখে ছায়াটি ধীরে ধীরে কাছে আসছে। তার মনে হয়, এই ছায়া কি তার প্রতীক্ষার অবসান ঘটাবে?
ছায়াটি ক্রমে পরিস্কার হয় এবং আদ্রিতা দেখতে পায়, মেঘদূত, তার জীবনের পারিসকে। তার হৃদয় দ্রুত স্পন্দিত হতে থাকে, আনন্দে চোখে জল ধারা বয়ে যায়। মেঘদূত ক্লান্ত ও ধুলোমাখা, কিন্তু তার চোখে আদ্রিতার জন্য অপরিসীম ভালোবাসার আলো। তার শরীর ভাঙাচোরা, যুদ্ধের ক্ষতচিহ্নে ভরা, কিন্তু তার মনে রয়েছে অপরাজেয় ভালোবাসা। দুজনের চোখে চোখ পড়তেই, পৃথিবী যেন থেমে যায়। সূর্য স্মিত হয়ে জায়। আদ্রিতা ছুটে গিয়ে মেঘদূতের বুকে মিশে যায়, তার বুকে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু ধারা ঝরে পড়ে। মেঘদূত তার প্রেমিকার চুলে হাত বুলিয়ে বলে, “আমি ফিরে এসেছি, আদ্রিতা।”
আদ্রিতা তার কাছে গিয়ে পাত্রটি তুলে দেয়। মেঘদূত পাত্রটি গ্রহণ করে, গোলাপের পাঁপড়ির গন্ধে মুগ্ধ হয়। তার চোখে জল এসে যায়, সে বুঝতে পারে, এই অপেক্ষার মুহূর্তগুলো আদ্রিতার জন্য কতটা কষ্টকর ছিল।
“আদ্রিতা,” মেঘদূত মৃদু কণ্ঠে বলে, “আমি ফিরে এসেছি।”
আদ্রিতার চোখে অশ্রু ঝরে পড়ে, কিন্তু সে হেসে ওঠে। তাদের প্রতীক্ষার শেষ হয়েছে, এবং প্রেমের পূর্ণতা তাদের জীবনকে আবার রাঙিয়ে তুলেছে। গোধূলির আলোতে তারা একে অপরকে আলিঙ্গন করে, যেন এথেন্সের প্রতিটি সুর তাদের মিলনের সুরে বেজে ওঠে। অলিম্পাসের দেবতারা যেন তাদের আশীর্বাদ দিচ্ছেন, তাদের ভালোবাসা যেন এক অমর কাব্যের জন্ম দিলো।