১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস
১৯৭১ সালে দীর্ঘ ২৯০ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন দেশরত্ন নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অবশেষে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রিয় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এই দিন সদ্য স্বাধীন হওয়া সর্বভৌম বাংলাদেশের পা রাখেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি বাংলাদেশে পৌঁছান ১৯৭২ সালে দুপুর ১ টা ৪১ মিনিটে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বাঙ্গালীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা অর্পণ করেন। এই দিন আওয়ামী লীগের ক্ষমতাশীল নেতারা বিভিন্ন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এবং ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা অর্পণ করেন।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। মুক্তিযুদ্ধের মূল কারিগর বঙ্গবন্ধু হলেও তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে পা রাখেন ১৯৭২ সালে। আজকের আর্টিকেলে আমরা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন তাহলে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক:
সূচিপত্র
স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস কত সালে
পাকিস্তানের শাসন শোষণ এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর যতবারই মুখ খুলেছেন ততবারই তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি বাঙ্গালীদের সব ধরনের আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবং এই নেতৃত্বের জন্য তাকে বারবার জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। পাকিস্তানের গড়ে তোলা সব চক্রান্তের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা।
বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ ২৯০দিন কারাবাসের পর অবশেষে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তার প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে পদার্পণ করেন। এই দিনটিকে বর্তমানে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করে থাকে।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পটভূমি ও গুরুত্ব
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চ ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ভাষণ দেওয়ার পর তুমি পশ্চিম পাকিস্তানিদের চোখের কাঁটা হয়ে যান। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের ২৫ এ মার্চ কালো রাতে তিনি তার ধানমন্ডির বাসা থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণা পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি কারাগারে থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের রূপকার ছেলের তিনি। তার ৭ ই মার্চের ভাষণের পর আপামর জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে তাকে ফাঁসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নাও হয়। কারাগারে তার উপর চালানো হয় অমানুষিক অত্যাচার এবং শেষ পর্যন্ত তাকে ফাঁসির মঞ্চ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়।
কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অদম্য সাহস এবং দেশ-বিদেশে তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে হার মানে পাক হানাদার বাহিনী। শেষ পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানীরা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতেই তার নীল নকশা অনুযায়ী বাঙালিরা যুদ্ধ পরিচালনা করে। বাঙালির বিপুল প্রতিরোধের মুখে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার খবর বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে পান। বাঙালি স্বাধীনতা অর্জন করলেও বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া যেন স্বাধীনতা পূর্ণতা পাচ্ছিল না। অনেক উদ্বেগ উৎকণ্ঠা পার করে অবশেষে বঙ্গবন্ধু স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এক্ষেত্রে বলা বাহুল্য, ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে কারাগার হতে মুক্তি প্রদান করে পাকিস্তানীরা।
এখান থেকে বঙ্গবন্ধু সরাসরি লন্ডনে পৌঁছান, এবং ভারত সফর শেষে তিনি ফিরে আসেন তার স্বদেশে। বিমানবন্দরে তাকে লাখো বাংলাদেশী অভ্যর্থনা জানাতে আসে। বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পৌঁছে যান রেসকোর্স ময়দানে। এখানে তিনি জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন “বাঙালির ভালোবাসার জন্য আমি রক্ত দিতে প্রস্তুত”। বাঙালি জাতীয় এবং রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পটভূমি ও গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম।
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস
১৯৮১ সালে ১৭ই মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাচন কাটিয়েছেন। অবশেষে এই দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তিনি বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হতে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এই দিন ঢাকার রাজধানী বিভিন্ন মিছিল এবং স্লোগানে কাঁপে। বাঙালি জাতীয় এবং রাজনৈতিক জীবনে এই দিনটি ও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাঙালি একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা পেয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধুর নির্মম মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পাহাড়ের সেই স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়। বাঙালির জীবনে নেমে আসে কালো অধ্যায়। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে।
সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলি
১. শেখ মুজিবুর রহমানের মাতার নাম কি?
উত্তর: হোসনে আরা বেগম।
২. মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
৩. বঙ্গবন্ধু জীবনে প্রথম কারাভোগ করেন কত সালে এবং কেন?
উত্তর: ভাষা আন্দোলনের জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ থেকে ১৫ই মার্চ পর্যন্ত কারা ভোগ করেন।