ভূমিকম্প কী, কেন হয় বাংলা ২০২৪
মাটির নিচে শিলার পিড়নের ফলে মারাত্মক শক্তি সঞ্চারিত হয়। ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে এই শক্তি হঠাৎ মুক্তি পেলে ভূ তত্ত্বের কিছু অংশ হঠাৎ কেঁপে ওঠে। এবং এই আকস্মিক আন্দোলনের ফলে যে ক্ষণস্থায়ী কম্পন সৃষ্টি হয় তাকে ভূমিকম্প (Earthquake) বলে। এই শক্তিশালী কম্পন তরঙ্গ ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
ভূমিকম্পের এই কম্পন নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে উৎপন্ন হয়। এবং উৎপত্তিস্থল থেকে বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে, তবে এটি নির্ভর করে ভূমিকম্প কতটুকু শক্তিশালী তার উপর। ভূমিকম্প সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
তবে ইতিহাসে কিছু ভূমিকম্পের রেকর্ড আছে যেগুলো ১০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। কিন্তু এই স্বল্প সময়ের স্থায়িত্বেও ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারে ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের মূল কারণ হলো ভূগর্ভের ফাটল এবং স্তরচ্যুতি। নিচে আমরা ভূমিকম্প (Earthquake) সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করব:
সূচিপত্র
ভূমিকম্প কাকে বলে
ভূগর্ভের অভ্যন্তরে নির্দিষ্ট মাত্রায় কম্পন এর ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। এই আকস্মিক আন্দোলন প্রাকৃতিক এবং মানব সৃষ্ট দুটি কারণেই হতে পারে। ভূমিকম্পের প্রাকৃতিক কারণ হলো ভূগর্ভের ফাটলের কারণে। এবং ভূগর্ভের নিচে স্তরচুতির কারণেও ভূমিকম্প সংঘটিত হয়।
আর ভূমিকম্পের প্রাকৃতিক কারণগুলো হলো নিউক্লিয়ার গবেষণায় ঘটানো আণবিক পরীক্ষা, খনিতে যেকোনো ধরনের বিস্ফোরণ ইত্যাদি। পৃথিবীর ভূ অভ্যন্তরে ভুকম্প তরঙ্গ উৎপাদিত হয়। এবং এই জায়গাটিকেই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
তবে কেন্দ্রস্থলে উত্তেজিত হওয়ার পর থেকে সামান্য কিছু সময়ের মধ্যে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভূমিকম্প উৎপাদিত হওয়ার পর থেকে উৎপত্তিস্থল এর ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করে। এবং উৎপত্তিস্থল থেকে ৭০০ কিলোমিটার গভীরে কম্পন সৃষ্টি করতে পারে।
এছাড়াও পড়ুন: ২৬ শে মার্চ এর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য
ভূমিকম্প কেন হয়
ভূমিকম্প হচ্ছে ভূগর্ভের অভ্যন্তরে সৃষ্ট কম্পন। ভূগর্ভের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের শিলা থাকে। যখন একটি শিলা অন্য একটি শিলার উপরে উঠে আসে এবং অধিক শক্তি সঞ্চারিত করে তখন তাকে ভূমিকম্প বলে। পৃথিবীপৃষ্ঠের উপরের অংশের হঠাৎ শক্তিশালী কম্পন এর ফলে এই ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতিবছর পুরো পৃথিবীতে প্রায় ৬ হাজার ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
হঠাৎ করে আপনি যেখানে অবস্থান করছেন তার চারপাশের জিনিস যদি দুলতে থাকে অথবা কাঁপতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে ভূমিকম্প হচ্ছে। পৃথিবীতে বছরে যে পরিমাণ ভূমিকম্প হয় তার অধিকাংশ গুলোই আমরা টের পাইনা। তবে যে ভূমিকম্পের মাত্রা ৬ এর উপরে হয় তা আমরা অনুভব করতে পারি।
ভূমিকম্পের কারণ কয়টি
ভূমিকম্প সাধারণত তিনটি কারণে হয়ে থাকে। কারণগুলো হলো:
- ভূপৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন,
- আগ্নেয়গিরি অগ্নুৎপাত গঠিত কারণ,
- শিলা চ্যুতিঘটিত কারণে।
নিউক্লিয়ার গবেষণার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের আণবিক পরীক্ষা থেকেও ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে পারে। তবে এটিকে মানব সৃষ্ট কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। বাংলাদেশের আটটি ফল্ট জোন রয়েছে। এই ফল্ট জোনগুলোতে টেকনিক প্লেট অবস্থান করে। এই প্লেট গুলোর হঠাৎ মিলিত হওয়া থেকে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
পদ্মা সেতুর ভূমিকম্প সহনীয় মাত্রা কত
সর্বোচ্চ নয় মাত্রায় ভূমিকম্প হলেও পদ্মা সেতুর তেমন ক্ষতির কোন আশঙ্কা নেই। ভূমিকম্প সহনীয় এই পদ্মা সেতুর আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১০০ বছর। তবে নয় মাত্রার উপরে ভূমিকম্প হলে পদ্মা সেতুতে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে পদ্মা সেতুর কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
এছাড়াও পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ কে
ভূমিকম্পের সময় কী করবেন
চলুন এক নজরে দেখিনি ভূমিকম্পের সময় কি করবেন?
- খোলা জায়গায় অবস্থান নিন,
- ঘরে থাকলে টেবিলের নিচে অথবা খাটের নিচে অবস্থান নিন,
- কোন বিল্ডিংএ অবস্থান করলে একই জায়গায় অনেক মানুষ জড়ো হবেন না,
- লিফট এড়িয়ে চলুন,
- ভূমিকম্পের সময় গাড়িতে থাকলে গাড়ি খোলা জায়গায় পার্ক করে গাড়িতে অবস্থান করুন,
- ভূমিকম্পের সময় গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ এর কাছাকাছি অবস্থান করবেন না,
- সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত থাকতে চাইলে ভূমিকম্প পরবর্তী এক ঘন্টা সতর্কতা অবলম্বন করুন।
উপসংহার
আজকে এই আর্টিকেলে আমরা ভূমিকম্প কি, কেন হয়, ভূমিকম্পের কারণ এবং ভূমিকম্প হলে করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যারা ভূমিকম্প সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা চাচ্ছিলেন আশা করি আজকের আলোচনা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. বাংলাদেশে ভূমিকম্প হওয়ার কারণ কি?
উত্তর: আমাদের দেশে ভূমিকম্প হওয়ার কারণ হলো টেকটনিক প্লেট এর নড়াচড়া।
২. ভূমিকম্পের সময় ভূমি কতটুকু নড়ে?
উত্তর: ভূমিকম্পের সময় ভূমি কয়েক মিটার পর্যন্ত নড়তে পারে।
৩. বাংলাদেশের কোন অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প প্রবণ?
উত্তর: উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশ, সিলেটের বিভিন্ন শহর, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। এসব এলাকায় ভূমিকম্প বেশি হয়।