ইবাদত বলতে কি বুঝায় । ইবাদতের অর্থ কী?

ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজই হচ্ছে ইবাদত। এই ‘’ইবাদত’ হচ্ছে মুলত এমন একটি পন্থা যার মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা তাদের ধর্ম পালন করে থাকেন।

আভিধানিক দিক থেকে বলতে গেলে ‘ইবাদত’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে আনুগত্য করা, দাসত্ব করা, অনুগত হওয়া ইত্যাদি। এটি একটি আরবি শব্দ যা “আবাদা” শব্দের ক্রিয়ামূল হতে আগত। ইসলাম ধর্মে অনেক গুলো বিধি বিধান রয়েছে এই সমস্ত বিধি বিধান মেনে চলাই হচ্ছে ইবাদত। একজন মুসলিমের প্রধান কর্তব্যই হচ্ছে আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং ইবাদতই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব ।

ইবাদত বলতে কি বুঝায়।

ইবাদত বলতে প্রধানত আনুগত্য করা বুঝালেও এ সম্পর্কে  বিভিন্ন স্কলার দের বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। যেমন আবুল আ’লা মওদুদী (র.) ইবাদত সম্পর্কে বলেছেন- “ ইবাদত হচ্ছে একজন সত্তা কে মাথা পেতে মেনে নেয়া অর্থাৎ মহান আল্লাহতালার আনুগত্য কে বরণ করে নেয়া”। আবার শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (র.) ইবাদত সম্পর্কে বলেছেন যে, “ ইবাদাত হচ্ছে সকল রাসূলগণের মাধ্যমে আল্লাহ যে বিধান দিয়েছেন তা সঠিকভাবে মেনে চলা এবং আল্লাহ যে কাজ পছন্দ করেন তা করা এবং যা অপছন্দ করেন তা বর্জন করা এবং গোপনীয়তা বজায় রাখা।

এক কথায় বলতে গেলে ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন যে এই সমস্ত জগতের প্রত্যেকটি জিনিসের সৃষ্টিকর্তা এবং পালনকর্তা এক ‘আল্লাহ’। তারা বিশ্বাস করেন আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, তারা আল্লাহ তায়া’লার আদেশ মেনে চলেন, নবী রাসুলদের দেখানো পথ অনুসরণ করেন এবং সমস্ত নিষিদ্ধ কাজ থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখেন, এটিই হচ্ছে ইবাদত এবং প্রত্যেক মুসলিম এই ইবাদত পালন করতে বাধ্য।

ইবাদত প্রধানত কয় প্রকার ও কি কি

ইবাদত দুই ধরনের হতে পারে –

  • হাক্কুল্লাহ ইবাদত
  • হাক্কুল ইবাদত

হাক্কুল্লাহ ইবাদত বলতে বুঝায় আল্লাহ তা’য়ালার হক এবং হাক্কুল ইবাদত বলতে বোঝায় বান্দা হক।

হাক্কুল্লাহ ইবাদত

হাক্কুল্লাহ ইবাদত গুলো হচ্ছে যা আমরা সরাসরি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করে থাকি। অর্থাৎ যে কাজ গুলো আল্লাহ মুসলিমদের উপর ফরজ করেছেন তা আদায় করাই হচ্ছে হাক্কুল্লাহ ইবাদত। যেমন- নামাজ পড়া, রোজা রাখা, যাকাত দেয়া, হজ্জ পালন করা ইত্যাদি। এছাড়াও জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে, প্রত্যেকটি কাজে আল্লাহর বিধান মেনে চলা, আল্লাহর অপছন্দ কাজ গুলো না করাও হাক্কুল্লাহ ইবাদতের মধ্যে পড়ে।

এছাড়াও পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ কে

হাক্কুল ইবাদত

অপরদিকে হাক্কুল ইবাদত হচ্ছে সে সকল ইবাদত যা একজন বান্দার হক আদায়ের মাধ্যমে করা হয়। প্রত্যেক মুসলিমের অন্য এক মুসলিমের উপর ছয়টি হক থাকে। যেগুলো হচ্ছে – সালামের জবাব দেওয়া, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ নেয়া বা দেখতে যাওয়া, মৃত ব্যক্তির জানাজায় অংশগ্রহন করা, অসহায় এবং মজলুম ব্যক্তির সাহায্য করা তাদের পাশে থাকা, দাওয়াত কবুল করা এবং হাচির জবার দেওয়া। একজন বান্দার প্রতি অন্য বান্দার এই অধিকার গুলো পালন করলেই হাক্কুল ইবাদত পালন করা হয়ে থাকে। প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব হচ্ছে সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলা, কারো মনে কষ্ট না দেয়া, কাউকে আঘাত না করা, কারো সাথে অন্যায় অবিচার না করা, কারোর অধিকার ক্ষুন্ন না করা, পাড়া প্রতিবেশী এবং আত্মীয় স্বজন সবার সাথে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখা, মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া। এই কাজ গুলোই হাক্কুল ইবাদতের মধ্যে পড়ে। এছাড়াও জীবের প্রতি দয়া দেখানোও হাক্কুল ইবাদত।

প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য এই ইবাদত গুলো পালন করা এবং অন্যদের ইবাদত পালনে উৎসাহিত করা। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন, সুন্দর জীবন দিয়েছে, খাদ্য পানীয় এবং বেচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিস দান করেছেন। আমরা আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ এবং আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার উপায় হচ্ছে ইবাদত।

হাক্কুল ইবাদতের গুরুত্ব কি

প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে ইবাদতের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করার জন্য। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন –

“ আমি জিন ও মানবজাতিকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি “

(সুরা যারিয়াত: আয়াত—৫৬)

মহান আল্লাহ আরো বলেছেন,

“হে মানুষ তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ইবাদাত কর, যিনি তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো।”

এ দ্বারা স্পষ্ট যে মুসলমানদের প্রধান কর্তব্যই হচ্ছে আল্লাহর ইবাদত করা এবং আল্লাহ তায়া’লার সন্তুষ্টি অর্জন করা। দুনিয়ার জীবনে পরেও এক জীবন আছে যা চিরস্থায়ী, এর নাম হচ্ছে আখিরাত। আল্লাহ তা’য়ালা তার বান্দাদের দুনিয়াবি কাজ কর্ম ও ইবাদতের উপর ভিত্তি করেই তাদেরকে আখিরাতে পুরষ্কৃত করবেন কিংবা শাস্তি দিবেন। তাই,প্রত্যেক মুসলমানেরই উচিৎ ইবাদত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা এবং তাতে আমল করা।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই পোস্টটি সাধারণ তথ্যের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে। এই তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা এবং সঠিকতা নিয়ে কোনো গ্যারেন্টি আমরা দিচ্ছি না। এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে নেওয়া যেকোনো পদক্ষেপ সম্পূর্ণ আপনার নিজের ঝুঁকিতে নিবেন। এই পোস্টের ফলে হওয়া যেকোনো ক্ষতির জন্য আমরা দায়ী থাকবো না।
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More