দাগ নাম্বার দিয়ে জমির মালিকের নাম বের করুন
অনেকেই দাগ নাম্বার দিয়ে জমির মালিকের নাম কিভাবে বের করতে হয় তা অনলাইনে সার্চ করে থাকেন। আপনি যদি সাবলীলভাবে জানতে চান যে কিভাবে দাগ নাম্বার দিয়ে জমির মালিকের নাম বের করতে হয় তাহলে আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়তে হবে। অনেক সময় আমরা কষ্টের টাকা দিয়ে জমি কিনে মহা বিপদে পড়ে যাই।
এর কারণ হলো জমি কেনার আগে আমরা অনেক সময় জমির মালিকানা যাচাই-বাছাই করি না। অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসে দাগ নাম্বার দিয়ে জমির মালিকের নাম বের করা সম্ভব। আপনি ঘরে বসে জমির দাগ নাম্বার অথবা খতিয়ান নম্বর ও বের করতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেই কিভাবে দাগ নাম্বার দিয়ে জমির মালিকের নাম বের করতে হয় সেই সম্পর্কে।
সূচিপত্র
জমির মালিকের নাম জানতে যা যা প্রয়োজন
জমির মালিকের নাম জানতে জমি সম্পর্কে কিছু সাধারণ বিষয় আপনার জেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকের নাম জানতে যা যা প্রয়োজন তা হল:
- জমির খতিয়ানের ধরন: সি.এস/ স.এ/ আর.এস/ সিটি/ বি.এস ইত্যাদি,
- জমি যেখানে অবস্থিত সেখানকার উপজেলা অথবা থানার নাম,
- জেলা এবং বিভাগের নাম,
- জমির খতিয়ান নাম্বার এবং মৌজা নাম্বার ইত্যাদি।
এছাড়াও জমির মালিকের নাম জানতে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের প্রয়োজন রয়েছে। সেগুলো হলো:
- যে খতিয়ানের পর্চা দিয়ে জমির মালিকানা যাচাই করতে চাচ্ছেন সেই পর্চার ফটোকপি,
- মোবাইল অথবা কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে।
জমি সম্পর্কে উপরিউক্ত তথ্যগুলো জানা থাকলে যে কেউ অনলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকের নাম বের করতে পারবেন। এবং অনলাইন এর মাধ্যমে জমির সঠিক মালিকানা প্রদর্শিত হবে।
এছাড়াও পড়ুন: খতিয়ান অনুসন্ধান
দাগ নাম্বার দিয়ে জমির মালিকের নাম বের করার পদ্ধতি
ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে কিভাবে দাগ নম্বর দিয়ে জমির মালিকের নাম বের করতে হয় তা আমরা নিচে ধাপে ধাপে আলোচনা করব। অনলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকের নাম বের করতে হলে আপনার মোবাইল অথবা কম্পিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। চলুন তাহলে পদ্ধতিটি জেনে নেওয়া যাক:
ধাপ ১: ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
দাগ নাম্বার দিয়ে জমির মালিকের নাম বের করার পদ্ধতি বর্তমানে বেশ সহজ। এটার জন্য সর্বপ্রথম প্রবেশ করতে হবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের https://www.eporcha.gov.bd/ এই ওয়েবসাইটে।
ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর “নামজারি খতিয়ান” অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে।
ধাপ ২: খতিয়ানের বিভিন্ন অপশন সিলেক্ট করুন
নামজারি খতিয়ান অপশনটি সিলেক্ট করার পর আপনার সামনে উপরের ছবি ন্যায় একটি পেজ আসবে। এখান থেকে একে একে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, মৌজা, খতিয়ানের ধরন এবং খতিয়ান নাম্বার বসাতে হবে। এখানে কোন তথ্য ভুল থাকলে আপনি পরবর্তীতে জমির মালিকের নাম জানতে পারবেন না।
ধাপ ৩: মালিকের নাম খুঁজুন
খতিয়ান নাম্বার বসানোর জন্য যে ফাঁকা ঘরটি রয়েছে সেখানে আপনার জমির খতিয়ান নাম্বারটি নির্ভুলভাবে বসাতে হবে। এখানে আইন অনুযায়ী খতিয়ানের মালিকের নাম সরাসরি চলে আসবে। পরবর্তীতে মালিকের নামের উপর ডাবল ক্লিক করলে আপনি জমির খতিয়ান নাম্বার এবং দাগ নাম্বার দেখতে পাবেন।
এছাড়াও পড়ুন: অনলাইনে জমির নকশা বের করার নিয়ম
ধাপ ৪: নামের উপর ডাবল ক্লিক করে দাগ নাম্বার দেখুন
আপনি যখন জমির খতিয়ানের মালিকের নাম দেখতে পাবেন তখন ঐ মালিকের নামের উপর ডাবল ক্লিক করলে জমির দাগ নাম্বার এবং খতিয়ান নাম্বার দেখতে পাবেন। নিচে “বিস্তারিত” নামক একটি অপশন থাকবে। এখানে ক্লিক করলে আপনি জমির দাগ নাম্বার দেখতে পাবেন।
ধাপ ৫: মালিক / দখলদারের নাম যাচাই-বাছাই করুন
বিস্তারিত বাটনে ক্লিক করার পর জমির মালিকের নাম সংবলিত একটি পেজ আপনার সামনে আসবে। এখান থেকে আপনি দেখতে পাবেন:
- জমির দাগ এবং খতিয়ান নাম্বার,
- জমির মালিকের নাম,
- পর্চার জন্য আবেদন করার অপশন।
তবে অনলাইনে দাগ নাম্বার দিয়ে জমির মালিকের নাম বের করতে হলে অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। আপনি যদি সঠিক খতিয়ান নাম্বার প্রবেশ করিয়েও জমির মালিকের কোন তথ্য না পান তাহলে বুঝতে হবে এই জমি সম্পর্কে কোন তথ্য অনলাইনে আপডেট করা হয়নি। তবে এসব তথ্য অল্প দিনের মধ্যেই আপনি পেয়ে যাবেন।
উক্ত পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করে খুব সহজে ঘরে বসে দাগ নাম্বার দিয়ে জমির মালিকের নাম বের করা সম্ভব। যদি আপনি সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করতে চান তাহলে আমাদের নিচের লেখাটুকু পড়ুন।
সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করার নিয়ম
অনলাইনের মাধ্যমে সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করতে হলে সাইটিফাইড কপির জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সমাপ্ত করতে হবে। এবার আপনার সামনে “খতিয়ান অনুসন্ধান” নামক একটি অপশন আসবে। এই অপশনে ক্লিক করে কিছু তথ্য পূরণ করার মাধ্যমে আপনি সার্টিফাইড কপি এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। চলুন তাহলে জেনে নেই সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করার নিয়ম:
সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করতে হলে জমির খতিয়ান এবং মৌজা নাম্বার, ইংরেজিতে নাম এবং জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার, ইমেইল এবং মোবাইল নাম্বার, জন্মতারিখ এবং বিস্তারিত ঠিকানা প্রবেশ করিয়ে শুদ্ধভাবে ক্যাপচা কোড পূরণ করতে হবে। পরবর্তীতে আপনি যে মাধ্যমে পেমেন্ট করতে চান সেই মাধ্যমটি সিলেক্ট করুন।
সার্টিফাইড কপির আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য আপনি আবেদন ফ্রি সর্বপ্রথম প্রবেশ করান। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে খুব সহজে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে দাগ নাম্বার দিয়ে জমির মালিকের নাম বের করা সম্ভব। এবং উপরি উক্ত পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করে সার্টিফাইড কপি এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
অনলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকের নাম জানার নিয়ম
দাগ নাম্বার দিয়ে জমির মালিকের নাম জানা যায় সাধারণত দুইটি উপায় অবলম্বন করে। এর মধ্যে প্রথমটি হল অনলাইনের মাধ্যমে। এবং দ্বিতীয় টি হল অফলাইনের মাধ্যমে। তবে বেশিরভাগ মানুষ এখন অনলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকের নাম বের করতে চান। অনলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকের নাম জানার নিয়ম আমরা ইতোমধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়লে আশা করি আপনারা এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাবেন।
অফলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকের নাম জানার নিয়ম
অনলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকের নাম জানতে চাইলে ঘরে বসে জানা সম্ভব। কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট থাকলেই আপনি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জেনে নিতে পারবেন দাগ নাম্বার দিয়ে জমির মালিকের নাম।
কিন্তু আপনি যদি অফলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকের নাম জানতে চান তাহলে জমির পর্চা অথবা জমির সর্বশেষ খতিয়ানের রেকর্ড নিয়ে স্থানীয় তফসিল অফিসে চলে যেতে হবে। ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে ভূমি কর্মকর্তার কাছে আপনার জমি সম্পর্কে তথ্য দিলে তিনি আপনার খতিয়ানের একটি ভলিউম বের করতে বলবেন।
আপনার আবেদনের ভিত্তিতে ভূমি কর্মকর্তা খতিয়ানের ভলিউম বের করে আপনার জমির মালিকের নাম বলে দিবেন। এক্ষেত্রে আপনারা আরও যা যা জানতে পারবেন তা হল-
- রেকর্ড নিষ্পত্তি নাম্বার,
- খাজনা আপডেট এর সর্বশেষ সাল,
- জোত নাম্বার এবং সঠিক দাগ নাম্বার,
- জমির মালিকের নাম,
- জমির পরিমাণ
আমাদের শেষ কথা
দাগ নাম্বার দিয়ে জমির মালিকের নাম বের করার পদ্ধতি পূর্বে বেশ ঝামেলা পূর্ণ থাকলেও বর্তমানে এই পদ্ধতি সহজ। কারণ এখন কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘরে বসে দাগ নাম্বার দিয়ে জমির মালিকের নাম বের করা যায়। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা খুব সহজে কিভাবে জমির মালিকের নাম বের করা যায় সে সম্পর্কে তুলে ধরেছি। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আমাদের ওয়েবসাইট এর সাথেই থাকুন।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১) জায়গার দাগ নম্বর কি?
উঃ প্রত্যেকটি ভূমি খণ্ডকে আলাদা আলাদা নাম্বার দিয়ে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এই নাম্বার কে সাধারনত দাগ নম্বর বলা হয়।
২) জমি কার নামে আছে কিভাবে দেখবো?
উঃ জমি কার নামে আছে তা দেখার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট https://www.eporcha.gov.bd/ এ প্রবেশ করতে হবে। এখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করে দেখতে পারবেন জমি কার নামে রয়েছে।
৩) খতিয়ান ফি কত?
উঃ আবেদনের জন্য কোর্ট ফি প্রদান করতে হয় ২০ টাকা। নোটিশ জারির জন্য ফি প্রদান করতে হয় ৫০ টাকা। রেকর্ড সংশোধন করার জন্য ফি দিতে হবে ১০০০ টাকা। মিউটেশন খতিয়ান সরবরাহ করার জন্য প্রদান করতে হবে ১০০ টাকা।