জন্ম নিবন্ধন যাচাই

বর্তমানে হাতে থাকা স্মার্টফোনের সাহায্যে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা সম্ভব। তাছাড়া মুঠোফোনের সাহায্যে জন্ম নিবন্ধনের কপি ডাউনলোড করে রাখতে পারবেন। যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে অর্থাৎ ভোটার আইডি কার্ড তৈরি হয়নি তাদের জন্য জন্ম নিবন্ধন যাচাই ( jonmo nibondhon jachai ) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারন ১৮ বছরের নিচে একজন ব্যক্তি যে বাংলাদেশের নাগরিক তার প্রমাণস্বরূপ জন্ম নিবন্ধন পত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

জন্ম নিবন্ধন যাচাই

জন্ম নিবন্ধন পত্রে একজন ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য যেমন: ব্যক্তির নাম, পিতা – মাতার নাম, স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা, জন্ম তারিখ ইত্যাদি সঠিকভাবে লেখা থাকে। বর্তমানে জন্ম নিবন্ধনের যাবতীয় প্রক্রিয়া অনলাইনের আওতায় আনা হয়েছে। জন্ম নিবন্ধন আবেদনের অবস্থা যাচাই, জন্ম নিবন্ধন যাচাই, জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি যাচাই করা অনলাইনের মাধ্যমেই সম্ভব।

জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার মাধ্যমে খুব সহজে বোঝা যায় এটি আসল কপি কিনা? বর্তমানে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন যাচাই করার পদ্ধতি বেশ সহজ। শুধুমাত্র জন্ম তারিখ এবং জন্ম নিবন্ধন এর ১৭ ডিজিটের নাম্বার দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করা সম্ভব। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার যাবতীয় পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।

সূচিপত্র

অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন এবং মৃত্যু নিবন্ধন চেক করার জন্য সরকারি ওয়েবসাইট হলো everify.bdris.gov.bd। এই ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার জন্য প্রথমেই আপনার ১৭ ডিজিট এর জন্ম নিবন্ধনের নাম্বার বসাতে হবে। তারপর আপনার জন্ম নিবন্ধনে যে জন্ম তারিখ দেওয়া হয়েছে সেটা বসাতে হবে।

নিচের অপশনে দেখবেন একটি ক্যাপচা কোড পূরণ করতে বলা হয়েছে। এই ক্যাপচা অবশ্যই সঠিকভাবে পূরণ করবেন। পরবর্তীতে “সার্চ” বাটনে ক্লিক করলে জন্ম নিবন্ধন এর সম্পূর্ণ পেজটি আপনার সামনে চলে আসবে।

এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, অনলাইন জন্ম নিবন্ধন যাচাই এর জন্য অবশ্যই ১৭ ডিজিটের নাম্বারটি প্রয়োজন হবে। ১৭ ডিজিটের কম সংখ্যক ডিজিট দিয়ে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন চেক করা যাবে না। বর্তমানে সব ধরনের হাতে লেখা জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কপি তৈরি করার প্রতি তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তাই জন্ম নিবন্ধন গ্রহণের সময় এর অনলাইন কপি তৈরি করুন।

এছাড়াও পড়ুন:  জাতীয় পরিচয় পত্র যাচাই

জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার প্রয়োজনীয়তা

অনলাইনে বিভিন্ন কারণে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ একমাত্র জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার মাধ্যমেই বোঝা যায় নিবন্ধনটি আসল নাকি নকল? তাছাড়া আরো বিভিন্ন কারণে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নিচে আমরা সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করব:

জন্ম নিবন্ধন সনদের বৈধতা

জন্ম নিবন্ধন সনদটি কতটুকু বৈধ তা বের করার জন্য অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে হয়। কারণ অনলাইনে কোন ধরনের নকল জন্ম নিবন্ধন এর কপি থাকেনা। তাই জন্ম নিবন্ধন সনদের বৈধতা বের করার জন্য অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করুন।

ভোটার আইডি কার্ড তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ

যারা নতুন ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করতে যাচ্ছেন, তাদের অবশ্যই জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি থাকতে হবে। তাই ভোটার আইডি কার্ড তৈরীর সময় জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি যাচাই করতে হয়।

ডিজিটাল জন্ম সনদের বৈধতা যাচাই

বর্তমানে প্রায় সকল কাজে জন্ম নিবন্ধনের ডিজিটাল কপি ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ১৭ ডিজিটের জন্ম নিবন্ধন এর সনদ অনলাইনে থাকলে তাকেই ডিজিটাল কপি বলা হয়। তাই অনলাইনে ডিজিটাল কপি চেক করার সময় অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

শিক্ষাজীবনে প্রবেশের সময়

শিশুরা যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয় তখন তার জন্ম নিবন্ধন এর প্রয়োজন হয়। বর্তমান সময়ে শিশুদের ভর্তি হওয়ার জন্য অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন চেক করা হয়ে থাকে।

জন্ম নিবন্ধন যাচাই অনলাইন চেক করার নিয়ম

জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে চেক করা বর্তমানে খুবই সহজ একটি পদ্ধতি। শুধুমাত্র জন্ম নিবন্ধন এর ১৭ ডিজিটের নাম্বার এবং জন্ম নিবন্ধন এর উল্লেখ্য জন্মতারিখ দিয়ে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন চেক করা সম্ভব। চলুন ধাপে ধাপে জেনে নেই  জন্ম নিবন্ধন যাচাই অনলাইন চেক করার নিয়ম গুলো কি কি?

ধাপ ১: ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন

জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার জন্য বাংলাদেশের সরকারি ওয়েবসাইট হলো https://everify.bdris.gov.bd । প্রথমে এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর যে তথ্যগুলো আপনার কাছে চাওয়া হবে সেগুলো সঠিকভাবে প্রবেশ করালেই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন কপি দেখতে পারবেন।

ধাপ ২: জন্ম নিবন্ধন নাম্বার প্রবেশ করান

ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর আপনার কাছে জন্ম নিবন্ধন নাম্বার প্রবেশ করানোর জন্য একটি অপশন দেওয়া হবে। উপরের চিত্রের ন্যায় ১৭ ডিজিটের birth registration number জন্ম নিবন্ধন নাম্বারটি প্রবেশ করান।

ধাপ ৩: জন্ম তারিখ প্রবেশ করান

পরবর্তী পর্যায়ে জন্ম তারিখ প্রবেশ করানোর জন্য আপনার সামনে একটি ইনপুট বক্স আসবে। এখানে জন্ম নিবন্ধনের হাতে লেখা কপিতে যে জন্ম তারিখ উল্লেখ আছে এখানে সেই তারিখটি উল্লেখ করতে হবে।

ধাপ ৪: ক্যাপচা কোড পূরণ করুন

ধাপ ৪: ক্যাপচা কোড পূরণ করুন

জন্ম তারিখ পূরণ করার পর উপরের চিত্রের ন্যায় একটি ক্যাপচা কোড পূরণ করতে বলা হবে। এই ক্যাপটা কোডটি সতর্কতার সহিত পূরণ করতে হবে। এখানে সাধারণত একটি বিয়োগ বা যোগ করতে বলা হয়। বিয়োগ বা যোগটি সঠিকভাবে করে উত্তরটি জমা দিতে হবে।

ধাপ ৫: সার্চ বাটনে ক্লিক করুন

ক্যাপচা কোডটি সঠিকভাবে পূরণ হলে সব থেকে নিজের অপশনে দেখবেন “Search” নামের একটি অপশন রয়েছে। এই বাটনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৬: জন্ম নিবন্ধন এর ফলাফল চেক করুন

সার্চ বাটনে ক্লিক করার পর আপনার সামনে জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি চলে আসবে। এখান থেকে আপনি সব ধরনের তথ্যগুলো মিলিয়ে দেখতে পারেন। অনেক সময় যদি তথ্যে ভুল থাকে তাহলে Result not found আসে। সে ক্ষেত্রে সঠিক তথ্যটি প্রবেশ করিয়ে সার্চ বাটনে ক্লিক করে আপনার তথ্যগুলো মিলিয়ে নিন।

জন্ম তারিখ দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই

জন্ম তারিখ দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার জন্য সরকারি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন everify.bdris.gov.bd এই লিংকে। তবে এক্ষেত্রে জেনে রাখা জরুরী শুধুমাত্র জন্ম তারিখ দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে আপনার জন্ম তারিখের পাশাপাশি জন্ম নিবন্ধন রেজিস্ট্রেশন নাম্বার এর প্রয়োজন হবে।

যদি এই দুইটি তথ্য আপনার জানা থাকে তাহলে মাত্র ২ মিনিটেই আপনি জন্ম তারিখ দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই ( jonmo nibondhon jachai ) করতে পারবেন। যদি বিস্তারিত তথ্য না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটা পড়ুন। জন্ম নিবন্ধন যাচাই সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য আমাদের আর্টিকেল আলোচিত হয়েছে।

জন্ম নিবন্ধন যাচাই কপি ডাউনলোড

জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার পর মোবাইল এবং কম্পিউটার দুইটি ডিভাইসের মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন যাচাই কপি ডাউনলোড করা সম্ভব। মোবাইল দিয়ে ডাউনলোড করার জন্য সেভ বাটনে ক্লিক করুন।

আর যদি কম্পিউটারের মাধ্যমে ডাউনলোড করতে চান তাহলে ctrl+p এই দুটো বাটন একসঙ্গে চেপে ধরতে হবে। এই দুটো বাটন চেপে ধরার পর পপ-আপ চলে আসবে। আপনি চাইলে এখান থেকে জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপিটি পিডিএফ আকারে সংরক্ষিত করতে পারেন। এখান থেকে কপি প্রিন্ট করে নেওয়া সম্ভব।

pdf হিসেবে সেভ করার জন্য আপনাকে Destination অপশনে যেতে হবে। এই অপশন থেকে Save as PDF অপশন এ ক্লিক করুন। তাহলে আপনার কাছে ফাইলটি সেভ হয়ে যাবে। আর এই পর্যায়ে আপনি যদি প্রিন্ট করতে চান  তাহলে Microsoft Print to PDF অপশনে ক্লিক করুন। তাহলে কপিটি প্রিন্ট হয়ে যাবে।

জন্ম নিবন্ধন যাচাই অনলাইন চেক apps

জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে যাচাই করার জন্য যে অ্যাপস ব্যবহার করা হয় তা ইন্সটল করা খুবই সহজ। অ্যাপটি ইন্সটল করার জন্য আপনার ব্রাউজার থেকে থ্রি ডটস মেনু তে ক্লিক করুন। এখান থেকেই আপনি অ্যাপসটি ইন্সটল করার অপশন পেয়ে যাবেন। এখান থেকে সরাসরি অ্যাপসটি ইন্সটল করে জন্মদিন যাচাই অনলাইন চেক করতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন যাচাই 19860915428117351

19860915428117351 এই নাম্বারটি দিয়ে জন্ম নিবন্ধনের আইডি নাম্বার কে বোঝানো হয়। তবে এটি কোন আসল জন্ম নিবন্ধন এর নাম্বার নয়। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর জন্ম নিবন্ধন নাম্বারটি লিখতে হবে। এবং নাম্বার প্রবেশ করানোর পর আপনি খুব সহজেই জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে পারবেন।

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক/ পাঠিকা যারা জন্ম নিবন্ধন যাচাই সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্য জানতে চাচ্ছিলেন আশা করছি আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন। কিভাবে জন্ম নিবন্ধন যাচাই করতে হয় তা আমরা ধাপে ধাপে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছি। আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের কাছে জিজ্ঞাসা করতে পারেন। এবং আপনার পরিচিত কেউ যদি জন্ম নিবন্ধন যাচাই সম্পর্কে জানতে চাই তাহলে আমাদের আর্টিকেলটি তার সঙ্গে শেয়ার করুন।

সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী

অনলাইন জন্ম নিবন্ধন কিভাবে দেখব?

উঃ অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন চেক করার জন্য সরকারি ওয়েবসাইট everify.bdris.gov.bd এই লিংকে প্রবেশ করে জন্ম তারিখ এবং জন্ম নিবন্ধন রেজিস্ট্রেশন নাম্বার প্রবেশ করান।

কত বছর পর্যন্ত জন্ম নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট করা যায়?

উঃ সাধারণত ভোটার আইডি কার্ড হওয়ার আগ পর্যন্ত জন্ম নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট করা যায়।

জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে কত টাকা লাগবে?

উঃ সাধারণত জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে ৫০ টাকা লাগে, কিন্তু জন্ম তারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা জমা দিতে হয়।

বাংলাদেশে কি জন্ম সনদে জন্ম তারিখ পরিবর্তন করা যায়?

উঃ অবশ্যই, সরকারি ওয়েবসাইটে everify.bdris.gov.bd প্রবেশ করে জন্ম তারিখ পরিবর্তন করা সম্ভব।

জন্ম তারিখ দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই ওয়েবসাইটের লিংক?

উঃ: জন্ম নিবন্ধন এর যাবতীয় তথ্য চেক করার জন্য সরকারি এই everify.bdris.gov.bd ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই পোস্টটি সাধারণ তথ্যের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে। এই তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা এবং সঠিকতা নিয়ে কোনো গ্যারেন্টি আমরা দিচ্ছি না। এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে নেওয়া যেকোনো পদক্ষেপ সম্পূর্ণ আপনার নিজের ঝুঁকিতে নিবেন। এই পোস্টের ফলে হওয়া যেকোনো ক্ষতির জন্য আমরা দায়ী থাকবো না।
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More