মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা
মেথি রান্নার স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি হজমের জটিলতা দূর করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে মেথির জুড়ি মেলা ভার। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মেথি একটি মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে।
মেথিতে বিদ্যমান রয়েছে ফলিক অ্যাসিড, রিবোফ্লাভিন, কপার, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সহ আরো বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। এছাড়া মেথিতে ভিটামিন এ, বি ৬, সি, কে রয়েছে বলে একে সুপারফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে শরীরে গ্লুকোজের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট শোষণ করে। চলুন এক নজরে দেখে নেই মেথির উপকারিতা গুলো কি কি?
সূচিপত্র
পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা
চলুন এক নজরে দেখে নেই পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা গুলো কি কি?
- টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা বাড়ায়,
- খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে,
- যৌন ক্রিয়ায় সাহায্য করে,
- হাড় মজবুত করে,
- ক্যান্সারের জীবাণু ধ্বংস করে,
- কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে,
- আলসার এর বিরুদ্ধে লড়াই করে।
টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা বাড়ায়
৪০ বছরের পর পুরুষের টেস্টোস্টেরন এর মাত্র ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এই সময় প্রতিদিন মেথি সেবন করলে টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা স্বাভাবিক হয়।
খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে
মেথিতে বিদ্যমান স্যাপোনিন এবং ক্যুমারিন উপাদান শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখে।
যৌন ক্রিয়ায় সাহায্য করে
মেথি পুরুষের যৌন স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং পুরুষের শরীরের গোপন রোগসমূহ দূর করতে সাহায্য করে।
হাড় মজবুত করে
মেথি হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যা, হাড়ের ভঙ্গুরতা ইত্যাদি রোধে ব্যাপক সাহায্য করে থাকে। এক্ষেত্রে মেথি ভেজানো পানি অথবা মেথির পেস্ট খাওয়া যেতে পারে।
ক্যান্সারের জীবাণু ধ্বংস করে
প্রতিদিন খালি পেটে মেথি সেবন করলে ক্যান্সারের কোষ সৃষ্টিকারী জীবাণুগুলো ধীরে ধীরে অক্ষম হয়ে পড়ে। ফলে মেথি খেলে ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে
কিডনির বিভিন্ন সমস্যা যেমন: কিডনি ড্যামেজ হয়ে যাওয়া, কিডনিতে পাথর, কিডনি ফুলে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা মোকাবেলায় মেথি মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।
আলসার এর বিরুদ্ধে লড়াই করে
বিভিন্ন ধরনের আলসার এবং ব্রঙ্কাইটিস, টিউবারকুলোসিস এবং ফোড়া কমাতে মেথি সাহায্য করে। তাছাড়া অ্যানিমিয়া রোগের বিরুদ্ধে মেথি খুব ভালো একটি পথ্য।
চুলের জন্য মেথির উপকারিতা
চুল পড়ে যাওয়া, চুলের বৃদ্ধি কমে যাওয়া, খুশকির প্রবণতা, চুল নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা মোকাবেলায় মেথির উপকারিতা অনবদ্য। চলুন এক নজরে দেখে নেই চুলের জন্য মেথির উপকারিতা গুলো কি কি?
- মেথিতে বিদ্যমান প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, ফসফেট চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে,
- মেথির উপকারী উপাদান অ্যাসিড, স্যাপোনিন্স এবং ফ্ল্যাভনয়েড চুলের গোড়ায় সংক্রমণ এর হাত থেকে রক্ষা করে,
- মেথিতে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুশকি দূর করতে সাহায্য করে,
- মেথির পেস্ট চুলে লাগালে চুল তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরে পায়,
- মেথি থেকে তৈরি তেল চুলের অকালপক্কতা রোধ করতে সাহায্য করে,
- মেথির তেলের সঙ্গে সরিষা পাউডার মিশ্রিত করে চুলে লাগালে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং নতুন চুল গজায়।
মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা
মেথির উপকারিতা নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। চলুন জেনে নেই মেথি অপকারিতা গুলো কি কি?
- গর্ভবতী মায়েদের জন্য মেথি খুবই ক্ষতিকর,
- যারা পেটের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগবেন তারা মেথি এড়িয়ে চলুন,
- যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তারা কখনোই মেথি সেবন করবেন না,
- যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কম তারা মেথি খাবেন না, এটি রক্তে শর্করা মাত্র আরো কমিয়ে দিতে পারে,
- হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্ট জনিত রোগীদের জন্য মেথি ক্ষতিকর,
- পেটে গ্যাসের সমস্যা হয় তাদের মেথি এড়িয়ে চলা উচিত,
- মেথি খেলে অনেক সময় গায়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়,
- শিশুদের মেথি খাওয়ালে অনেক সময় অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে,
আশা করি আপনারা মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন।
উপসংহার
মেথি যেহেতু অনেক রোগ কমাতে সাহায্য করে তাই এটিকে সুপারফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রায় সব বয়সী মানুষের জন্য মেথিকে নিরাপদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে কিছু মানুষের জন্য মেথি ক্ষতিকর হতে পারে এবং আমরা আজকের আর্টিকেলে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি আমাদের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাবেন।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন:
১. মেথি কতটুকু খাওয়া উচিত?
উত্তর: প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ গ্রাম পরিমাণ মেথির গুড়া সেবন করা যেতে পারে।
২. মেথি কি জন্ম নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলে?
উত্তর: মেথি গর্ভনিরোধকগুলির কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে।
৩. প্রতিদিন মেথি পানি খেলে কি হয়?
উত্তর: হার্ট ভালো থাকে এবং স্ট্রোক এর সম্ভাবনা কমে যায়।